করোনা মহামারিতে অনেকের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা শঙ্কার মধ্যে পড়লেও আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো)। গতানুগতিক ব্যবসার এ কোম্পানিটির করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধেও (জুলাই-ডিসম্বর ২১) অব্যাহত ছিল। এতে করে কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। যার উপর ভিত্তি করে নিট মুনাফা বেড়েছে ৩৫৩%। যাতে শেয়ার দরও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
করোনার আগে বেক্সিমকোর আহামরি কোন ব্যবসা ছিল না। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হতো ১ টাকার কাছাকাছি। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে অনেক কোম্পানি যখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে হিমশিম খেয়েছে, তখন ব্যবসায় বড় উত্থান ঘটে বেক্সিমকোর। যাতে করে কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরের ০.৫১ টাকার ইপিএস বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে হয় ৭.৫৩ টাকা।
বেক্সিমকোর মুনাফায় এই অস্বাভাবিক উত্থানে শেয়ার দরে বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যাতে দেড় বছরেরও কম সময়ে কোম্পানিটির ২০ টাকার শেয়ার দর এখন ১৫০ টাকার উপরে অবস্থান করছে।
দেখা গেছে, ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর শেয়ারটি ২০ টাকার নিচে বা ১৯.৯০ টাকায় ছিল। যে শেয়ারটি ২৩ ফেব্রুয়ারি লেনদেন শেষে দাড়িঁয়েছে ১৫০.৭০ টাকায়। এ হিসাবে ১৬ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১৩০.৮০ টাকা বা ৬৫৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন…
ক্রাউন সিমেন্টের ১৬৪ কোটি টাকার বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও মুনাফায় ধস
বেক্সিমকোর চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ১ হাজার ৬৫৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ১৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বা ১২২ শতাংশ।
এদিকে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯১২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার পণ্য। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ১ হাজার ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার। এ হিসাবে বিক্রি বেড়েছে ৯০৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বা ৯১ শতাংশ।
বিক্রি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিটির পরিচালন ও সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে। কোম্পানিটির আগের বছরের প্রথমার্ধের ৪৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার পরিচালন (প্রশাসনিক ও বাজারজাতকরন) ব্যয় এ বছরে বেড়ে হয়েছে ৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর ২৬৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
বেক্সিমকোর আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধ শেষে (৩১ ডিসেম্বর ২০২০) ৩ হাজার ৭৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ও ১ হাজার ৫৬১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদিসহ মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা গত ৩১ ডিসেম্বর দীর্ঘমেয়াদি ৩ হাজার ৭৫২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ও স্বল্পমেয়াদি ১ হাজার ৫১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকারসহ মোট ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়।
কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে আয় বা বিক্রি থেকে পরিচালন ব্যয়, সুদজনিত ব্যয় ও কর সঞ্চিতি বিয়োগ শেষে নিট মুনাফা দাড়িঁয়েছে ৭৫৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৮.৬৭ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ১৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১.৯২ টাকা। এ হিসাবে নিট মুনাফা বেড়েছে ৫৯১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার বা ৩৫৩ শতাংশ।
মুনাফায় এই উত্থানের কারন হিসাবে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বাজার চাহিদা বৃদ্ধি, করোনায় পিপিই তৈরী ও রপ্তানি এবং মৌসুমকালীন (সিজনাল) ব্যবসা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে ডিএসইকে জানিয়েছেন। যা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৮৭৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের বেক্সিমকোতে ৭ হাজার ৩৩৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার নিট সম্পদ রয়েছে। যাতে কোম্পানিটির গত ৩১ ডিসেম্বর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮৩.৭২ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/আরএ